নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্লাস্টিক কারখানার কুচি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। এতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ৫০ হাজার লোকের। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খাতের আরও বিকাশ সম্ভব বলে জানান কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা।

জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নে রয়েছে প্রায় ১১০টি প্লাস্টিক কারখানা। কারখানাগুলোতে মূলত প্লাস্টিকের পুরনো বোতল এবং বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত প্লাস্টিক মেশিনে ভেঙে তৈরি করা হয় কুচি। এসব কুচি এখান থেকে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন বাজারে। প্রতিটি কারখানায় প্রতিদিন ৪০-৫০ শ্রমিক কাজ করেন।

শনিবার শহরের বাঙালিপুর এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, একদিকে বোতল কিংবা ভাঙা প্লাস্টিক বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে প্লাস্টিক কুচি শুকাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা।

উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অশুরখাই গ্রামের শ্রমিক আতিয়া পারভীন বলেন, স্বামী মারা যাওয়ায় অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতাম। তিন সন্তানকে নিয়ে একবেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে কোনো রকমে দিন কাটত। কিন্তু এখন প্লাস্টিক বর্জ্য কারখানায় কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।

কথা হয় কারখানার মালিক ইমরান হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, বিভিন্ন ভাঙারির দোকান থেকে তারা প্লাস্টিকের পুরোনো বোতল কেনেন প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে। অন্যান্য প্লাস্টিক সামগ্রী কেনেন ৩৫ টাকা কেজি দরে। তারপর এগুলো মেশিনের সাহায্যে পানি দিয়ে ওয়াশ করেন। পরে মাড়াই করে প্লাস্টিকের কুচি মেশিনের মাধ্যমে শুকিয়ে বস্তায় ভরে সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন এ কারখানায় শতাধিক মণ প্লাস্টিক সামগ্রী কেনা হয়। তিনি আরও বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্পের আরও প্রসার ঘটানো যেত।

ইলিয়াস হোসেন নামের আরেক প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী বলেন, পথে-ঘাটে এবং নালা-নর্দমায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে এনে এগুলো পরিষ্কার করে আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় প্লাস্টিকের গুটি। এরপর নতুন করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় নানা পণ্য। এখানে দুই-তিন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকে।

পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবেশের উপকার করছে দাবি করে তিনি বলেন, কোটি কোটি বোতলসহ প্লাস্টিক বর্জ্য যদি খাল, নদী দখল করত, তা হলে তা পলিথিনের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠত।

পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুরের পরিদর্শক (নীলফামারী জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) মনোয়ার হোসেন বলেন, যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক দ্রব্য পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এ ক্ষেত্রে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করায় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এ এলাকা রক্ষা পাচ্ছে।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হুসাইন বলেন, এ শিল্পের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে যদি তা পরিবেশের জন্য ইতিবাচক হয়, তা হলে সহযোগিতার বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

 

 

কলমকথা/ বিথী